আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী দল ও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি মো. সমীর সাত্তার।
সম্প্রতি ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিসিসিআই সভাপতি বলেছেন, ‘আমাদের ব্যবসা ও অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড এড়াতে ঐক্যমতে পৌঁছানো উচিত। অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে অবিলম্বে এটি করা উচিত।’
সাক্ষাৎকারটি একটি সিরিজের একটি অংশ, নির্বাচন-সম্পর্কিত অবরোধ কীভাবে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা বোঝার জন্য সংবাদ সংস্থা ইউএনবি এই সিরিজ প্রকাশ করছে।
সমীর বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেক উপায়ে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন- সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত, রপ্তানি আয় হ্রাস এবং উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে হরতাল ও অবরোধের পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধারের জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন। যা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে পারে।
একজন কর্পোরেট আইনজীবী হিসেব সমীর বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাস ফেরানো এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘যদি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য দেখি, আমরা দেখছি কোভিড-১৯ মহামারি এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন অস্থিরতা; বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশ বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।’
তিনি বলেন, এই ঘটনাগুলো বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ব্যবস্থাপনাকে কঠিন করে তোলে।
ডিসিসিআই প্রধান বলেছেন, এতে জ্বালানির দাম এবং ব্যবসা করার ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীদের আস্থা বাড়াতে কোম্পানি আইন দ্রুত সংস্কারের আহ্বান ডিসিসিআইয়ের
তিনি বলেন, বিরোধীদের ডাকা চলমান অবরোধ ও হরতালের কারণে পরিবহন চলাচল কমে যাওয়ায় স্থানীয় সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হয়, ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কম।
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, কিভাবে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে হরতাল ও অবরোধ অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল।
ঢাকা চেম্বার জানিয়েছে, ২০১৩ সালে এই ধরনের অস্থিরতার কারণে দৈনিক ১৬০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
২০১৪ সালে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, দৈনিক আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল।
এসব গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ডিসিসিআই প্রধান সমীর বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা শুধু ব্যবসার পরিবেশকেই বিপন্ন করছে না, জীবনযাত্রার মানকেও প্রভাবিত করছে।
জাতীয় অর্থনীতি অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে যেতে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যে এটি বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করছে।
সমীর বলেন, বাংলাদেশের হরতাল-অবরোধ সংস্কৃতি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে মারাত্মক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি মনে করেন, এই ব্যাঘাত সমগ্র অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে; যা উৎপাদন, কৃষি ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন শিল্পকে প্রভাবিত করতে পারে।
তিনি বলেন, উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাঘাতের ফলে উৎপাদনশীলতা হ্রাস, চাকরি হারানো এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থান দুর্বল হতে পারে। চলমান হরতাল-অবরোধ রপ্তানি-আমদানি প্রক্রিয়া ব্যাহত করছে।
তিনি আরও বলেন, হরতাল ও অবরোধের কারণে ব্যবসায়িক কার্যকলাপ হ্রাস পাওয়ার একটি প্রধান হুমকি; বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগের (এসএমই) জন্য।
তিনি সতর্ক করেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে কর্মসংস্থানসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের ৮০ শতাংশ কর্মকাণ্ডে হরতাল ও অবরোধের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যার ফলে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেতে পারে।’
আরও পড়ুন: শিল্প উন্নয়নে সহযোগিতা করতে ডিসিসিআই ও বিএসসিআইসি’র সমঝোতা স্মারক সই
রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর-বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব জরুরি: ডিসিসিআই সভাপতি